.সৃজনশীল মানে আপন সৃষ্টি.
সৃজন
শব্দের অর্থ হলো সৃষ্টি, আর শীল
শব্দের অর্থ হলো নিজ। অর্থাৎ সৃজনশীল শব্দের সম্পুর্ণ অর্থ হলো নিজ থেকে সৃষ্টি
করা বা আপন সৃষ্টি । যদি আমরা
কোন কিছু সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে আমাদের প্রথমে ঐ সৃষ্টি সম্পর্কে ভালো
ভাবে ধারণা থাকতে হবে, উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। আর জানতে
হলে আমাদের জানার আগ্রহ
থাকতে হবে। তবেই তো আমরা কোনকিছু সৃষ্টি করতো পারবো। সৃষ্টি সম্পর্কে
না জেনে কোন কিছু সৃষ্টি
করতে গেলে সেটি পুনাঙ্গতা পাবে কি? না পাবে না। কেউ নৌকার বৈটা
ধরতে না জানলে সে কখনো
নৌকা নিয়ে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারবেনা। বা কেউ সাতার না জানলে
সে নৌকা ভ্রমণের আসল মজা
উপভোগ করতে পারবেনা। তার মধ্যে সবসময় একটা ভয় কাজ করবে,
যদি নৌকা ডুবে
যায়! অথবা কোন বিষয় সম্পর্কে
সঠিক তথ্য না জেনে রিপোর্ট করতে গেলে রিপোর্ট সঠিক নাও হতে পারে।
আর যদি রিপোর্ট সঠিক না হয়, তাহলে নিজের সৃজনশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিজের সৃজনশীলতা
বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে যেটি
আমাদের প্রয়োজন, সেটি
হলো উক্ত বিষয় সম্পর্কে পূনাঙ্গ জ্ঞান লাভ করা। না আমরা সেটা করত চায় না,
সেটি আমরা
কিঞ্চি প্রয়োজন মনে করি না।
জাতি হিসেবে আমাদের একটি বাহুল্য দোষ আছে,
আমরা অর্থ ছাড়া বুঝিনা। সেটা জানা আমদের জন্য নিরর্থক।
আমরা অর্থের পিছনে ছাড়া
অন্য কোথাও ছুটি না,। জ্ঞান অর্জনের চেয়ে অর্থ অর্জনই আমাদের জন্য শ্রেয়। অর্থের লোভে নোংরা কাজ করতেও দ্বিধা
করি না। আমরা আজব একটা
জাতি! আমাদের দেশে দুধ বিক্রেতারা মানুষের দরজায় দরজায় গোরে, আর
মদ বিক্রেতার দরজায় দরজায় মানুষ গোরে। আমরা নিজেকে কখনো বিকাশিত করতে চায় না,
নিজের সৃজনশীলতাকে বহিঃ প্রকাশ ঘটাতে চায়না। আমরা জাতি হিসেবে
জানার অভিপ্রায়ি নয়।
আমরা অলস। আমাদের জানার ইচ্ছা শক্তি মৃত প্রায়। আমরা অন্যদের অনুকরণ অনুস্মরণ করতে জানি,
নিজেদের অন্যরা অনুকরণ অনুস্মরণ করোক সেটা চায় না। কারণ
আমাদের কাজ সেটা নয়, আমাদের কাজ সারাজীবন অন্যের গান গেয়ে
বেড়ানো, নিজেরা গান
তৈরি করতে জানিনা, তৈরি
করার চেষ্টাও করিনা। আমাদের হৃদয় পটে উদ্ভাবনী
শক্তি রসাতলে গেছে, সৃজনশীলতা কেন্সার রোগীর মতো ক্ষীণ
হয়ে গেছে। আমরা অন্যকে হুবুহু
কপি করতে জানি, নিজেকে
কপি রাইটার হিসেবে পরিচর দিই,
কিন্তু লেখক
হিসেবে নয়। হা এই লেখা পড়ে
অনেকের গা জ্বালা করতে পারে, করুক।
এটা চিনেমার নায়ক নায়িকার
কোমর দোলানো নাচ নয়, হলে
ভালো লাগতো। অনেক আগ্রহ নিয়ে দেখতো। না
এটা সেটা না। এটা গা জ্বালা
কথা। এটা লেখকের স্বভাব। এইটা সবার ভালো লাগার কথা নয়। একজন লেখক স্বভাবে
লেখা লেখি করবেই। কেউ
পড়ুক আর নাই পড়ুুক। এবার আসল কথায় আসি। নকল কথার চেয়ে
আসল কথার রস খাঁটি। অনেক বছর
পর আমাদের দেশের শিক্ষা গুরুদের মস্তক উর্বর হয়েছে। তারা শিক্ষা পদ্ধতিকে
নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করছে। নবীনদের মেধা বিকাশের দ্বার খুলে
দিয়েছে, অজানাকে জানার
জন্য,
অচেনাকে চেনার জন্য তাদের কৌতূহলী করে তোলেছে। এই মহৎ উদ্যোগের
জন্য তাদের সাধুবাদ জানানো উচিৎ। হয়তো এই পদ্ধতি আরো আগে থেকে চালু করলে আমরা আরো একধাপ
এগিয়ে থাকতাম। বর্তমানে
আমাদের দেশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়াশুনা
করতেছে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে
পরিক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা সৃজনশীন
কি সেটা এখনো ভালো ভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। কিভাবে সৃজনশীল প্রশ্নের যথাযথ উত্তর করবে সেটাও
ভালো করে জানে না। হয়তো
পরিক্ষা দিচ্ছে, ভালো
রেজাল্ট ও করতেছে। না সেটা শিক্ষার্থীদের দোষ
নয়। আমি শিক্ষকদেরও দোষ দিবো
না। তারা আমাদের মাথার মুকুট। কারণ বর্তমান স্কুল কলেজের শিক্ষক- শিক্ষিকারা
অতীতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়াশুনা করেনি। তারা গাইড বইয়ের প্রশ্ন মুখস্থ করে পড়াশুনা করেছে। হয়তো কিছুটা শিক্ষক শিক্ষিকা
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
সৃজনশীল সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের ভালো মতো সৃজনশীল
পড়াইতে পারতেছে। আর বাকি শিক্ষকরা হয়তো প্রশিক্ষণ পাইনি, পাইলেও বা অল্প। যে অভিজ্ঞতা দিয়ে সৃজনশীল ভালো ভাবে
শিক্ষার্থীদের মস্তিস্কে
পৌছে দেয়া সম্ভব নয়। এটা কতৃপক্ষের দায়বদ্ধতা । তারা সব শিক্ষকদের সৃজনশীল
সম্পকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ
দিয়ে আরো দক্ষ করে তুলতে পারেন। এতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আর গাইড বই
নির্ভর হতে হবেনা। অনেক সময় শিক্ষকরেরা বিভিন্ন সিরিজের গাইড বই
থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করে থাকেন,
যার কারণে শিক্ষার্থীরা দিন দিন গাইড বই নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তারা অনেকে
এখনো গাইড বই থেকে মুখস্থ
করে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি উদাহরণ দেয়া যাক:- মা তার সন্তানকে রাতে
একটি পাঠ মুখস্থ করতে
দিয়েছে। পাঠটি ছিল এই রকমই :- রহিমদের বাগানের গাঁদা ফুল গুলো দেখতে
চমৎকার। সন্তান দীর্ঘ সময় ধরে
পাঠটি মুখস্থ করে পরদিন ক্লাসে গিয়ে স্যারকে মুখস্থ লিখে দিয়ে আসল...রহিমদের
বাগানের গাঁদা ফুল গুলো দেখতে বলৎকার। কারণ সে শুধু পাঠটি মুখস্থ করেছে,
বুঝে পড়েনি। তাকে
চমৎকার শব্দের অর্থ বা এর
সমার্থক শব্দ শিখিয়ে দেয়া হয়নি। যদি সেটি তাকে জানিয়ে দেয়া হতো,
তাহলে সে চমৎকার শব্দের বানান ভূলে যাওয়ায়, এর পরিবর্তে সুন্দর বা মনোরম লিখতে পারতো। না তাকে শুধু মুখস্থ করানো
হয়েছে, বুঝিয়ে পড়তে বলা
হয়নি। মুখস্থ বিদ্যা সবসময় মস্তক চেদন হয়না। অনেক সময় মাথা থেকে হারিয়ে
যায়। আর বুঝে পড়লে সেটা
মস্তক চেদন হয়। সহজে ভূলে না। না সেটা আর হবেনা এখন মুখস্থ বিদ্যার যোগ
শেষ। এখন সৃজনশীলতার যোগ।
শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলে ভালো করতে যা প্রয়োজন তা হলো মূল বইয়ের পাঠ
ভালোভাবে আয়ত্ব করতে হবে।
পাঠ্য বইয়ের প্রতিটি লাইন বুঝে বুঝে পড়তে হবে। পাঠের মূল সারাংশ সম্পর্কে
পূর্ণ ধারণা থাকা আবশ্যক। না
হয় নৈব্যত্তিকে ভালো করতে পারবেনা। পাশাপাশি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তোরও
যথাযথ হবেনা। সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর করতে গেলে কয়েকটি
বিষয়ে লক্ষ রাখা জরুরি।
প্রশ্নপত্রে কোন একটি বিষয় সম্পর্কে উদ্দীপক দেয়া থাকবে। শিক্ষার্থীদের প্রথমে
জানতে হবে উদ্দীপকটি পাঠ্য
বইয়ের কোন পাঠের আলোকে তৈরি করা হয়েছে? কোন পাঠের সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্য রয়েছে?
ইত্যাদি বিষয় সমুহ লক্ষণীয়। আর
উদ্দীপক ও পাঠ্য বইয়ের পাঠের সাথে মিল রেখে
চারটি প্রশ্ন দেয়া থাকবে।
যথা:-(ক) জ্ঞানমূলক অংশ (খ)
অনুধাবনমূলক অংশ (গ) প্রয়োগমূলক অংশ (ঘ) উচ্চতর দক্ষতামূলক
অংশ। প্রথম দুটি প্রশ্ন, জ্ঞান ও
অনুধাবন পাঠ্য বইয়ের মূল পাঠের কোন গুরুত্বপূর্ণ লাইনের মাঝখান থেকে হুবুহু জানতে চাওয়া হবে। উদ্দীপকের সাথে
এ দুটি প্রশ্নের মিল থাকবেনা।
এ দুটি প্রশ্নের উত্তর করতে হলে পাঠ্য বইয়ের মূল পাঠের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ লাইন সম্পর্কে অবশ্যই অবশ্যই জানতে হবে। তা না হলে উক্ত প্রশ্নের যথাযথ উত্তর করা সম্ভব হবেনা। জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর এক বাক্যে ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর ৩-৪ বাক্যের মধ্যে সমাপ্তি করা শ্রেয়। অযথা উত্তর বড় না করে মূল কথাটা
গুছিয়ে লিখলেই হলো। যেহেতু
অল্প সময়ে ৭ টা সৃজনশীল প্রশ্নের
উত্তর করতে হবে। প্রয়োগমূলক ও উচ্চতর দক্ষতামূলক
প্রশ্ন দুটি উদ্দীপকের
আলোকে করা হবে। উদ্দীপকের সাথে মিল রেখে পাঠ্য বইয়ের মূল পাঠের সাথে
সমন্বয় করে নিজ নিজ লিখার
সাইজ অনুযায়ী এক বা দেঢ় পৃষ্ঠার মধ্যে আলাদাপ্রশ্ন দুটির উত্তর করতে হবে। একটি
উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নোত্তরে
সাধারণত চারটি অংশ থাকে। যা ঐ প্রশ্নের জ্ঞান,
অনুধাবন,প্রয়োগ
ও উচ্চতর দক্ষতা অংশ। আর প্রয়োগমূলকেও প্রথম তিনটি
অংশ, অনুধাবনমূলকে দুটি ও জ্ঞানে
একটি অংশ থাকে। যা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে অংশ সমূহ আলাদা প্যারা করে দেখালে প্রশ্নের
উত্তর আরো গোছালো হবে। এ
ক্ষেত্রে ভালো মার্কস পাওয়া সহজ হবে। সৃজনশীলে একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি
লক্ষ রাখতে হবে সেটি হলো
সময়ের প্রতি। ২০ মিনিট সময়ের মধ্যে একটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পন্ন করতে হবে। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে সব সৃজনশীল
প্রশ্নের উত্তর গোছালো
ভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ভালো মার্কস পাওয়া সহজ। উপরোক্ত বিষয় সমূহ ভালো ভাবে অনুধাবন করলে সৃজনশীল সহজ
থেকে আরো সহজতর হবে। আর নয়
সৃজনশীল ভীতি, সৃজনশীল
মানে আপন সৃষ্টি।
writer: (সাইদ বিন হোছাইন)
|
সাইদ, আমাদের পত্রিকায় লেখা পাঠানোর জন্য প্রথমত আপনাকে ধন্যবাদ ।ক্রিয়েটিভ প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে আপনার এই লেখা সত্যি আমাদের ছাত্র ছাত্রী দের জন্য জরুরি । সং যোজন ।পরবর্তীতে এই পদ্ধতির ইতিহাসটা তুলে ধরার অনুরোধ করছি ।
ReplyDeletehttps://plus.google.com/111734905813271525052/posts/DpqhZFh2cv7
ReplyDelete