সাইকো
সাইকো
অপরেশ পাল(অনুবাদ)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Part - 2
রোকনের নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে। রোকন ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তা । তবে সাধারন কর্মকর্তা না। স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন এজেন্ট। উপরন্তু এই স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন চার্জ সে। রোকনের সম্পূর্ণ নাম জোবায়ের আহামেদ রোকন। বয়স একত্রিশ তার। এ বয়সে তার মাথায় বেশ কিছু সাদা চুল শোভা পাচ্ছে। তবে সাদা চুলগুলো দেখতে খারাপ লাগে না। গত চার মাসে ছয়টা খুন হয়েছে। হ্যাঁ প্রতিদিনই দেশে খুনোখুনি হয়। সেটা নিয়ে পুলিশের মাথাব্যাথা। ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের না। তবে এ খুনগুলো স্বাভাবিক না। তাই যত সমস্যা আর দায়ভার তাদের নিতে হয়। খুনগুলো খুব ভয়াবহ যার কারনে তার উপর এসে এ কেসের দায়ীত্ব বর্তাচ্ছে। প্রথম খুনটা হয়েছিলো গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ। পলিমারের ব্যাগে ভালো করে পেঁচিয়ে লাশটা খুনি ডাষ্টবিনে ফেলে গিয়েছে। ডাষ্টবিনের কুকুরগুলো লাশের গন্ধ পেয়ে অদ্ভুত আচরণ করেছিলো। তাই মানুষজন লাশ আবিষ্কার করতে পারে । লাশটির মাথা আলাদা করা ছিলো। পেটের অংশটা পুরোপুরি আলাদাভাবে ছিলো। কাটা অংশ দিয়ে নাড়িভুড়ি বের হয়ে ভয়াবহ অবস্থা। মাথাটাকেও খুনি রেহাই দেয়নি। মাথায় চামড়া তুলে ফেলা হয়েছিলো। এরপর দাঁতগুলো একটাও নেই। দেখে মনে হচ্ছিলো জীবন্ত অবস্থায় দাঁত টেনে তোলা হয়েছে। আর এ কাজে সম্ভবত প্লায়ার টাইপ কিছু ব্যবহার করা হয়েছে। ঠোঁটের অবস্থাও ভয়াবহ। ঠোঁটের দুপ্রান্ত ধারালো ছুরি দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। দাঁতহীন মাড়ি সেখানে থেকে বেরিয়ে ছিলো। যে মেয়েটার লাশ পাওয়া গিয়েছিলো তার জীবিত অবস্থার ছবি দেখেছিলো রোকন। যে কেউ এ মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে চাইবে। কিন্তু তার লাশের অবস্থা কেউ যদি সামনাসামনি দেখে তাহলে তার কয়েক মাসের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। মেয়েটার নাম ছিলো লিসা। লাশ আবিষ্কারের তিন দিনের মাথায় তাকে এ কেসে নিযুক্ত করা হয়। রোকন প্রথমে ধরে নিয়েছিলো ব্যক্তিগত আক্রোশে খুনটা হয়েছে। সেই হিসাবে তার তদন্ত চলছিলো। কিন্তু অক্টোবরের চব্বিশ তারিখের খুনটা তাকে অন্যকিছু ভাবতে বাধ্য করে। তাকে বাধ্য করে ভাবতে যে খুনি একজন সাইকোপ্যাথ। দ্বিতীয় খুনটা প্রথমটার থেকে কম যায় না। বলা যায় ভয়াবহতার দিক থেকে এক কাঠি উপরে। এবার ভিকটিম ছিলো বাইশ বছর বয়সী একটা মেয়ে। নাম তমা । ভার্সিটি পড়ুয়া সাধারণ মেয়ে। খুনের ভয়াবহতা বেশি বলার কারন হচ্ছে এবার খুনী মেয়ের নিচের অংশের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। মেয়ের পায়ের প্রতিটি আঙ্গুলের প্রথমে নখ তুলেছে সে। তারপর ব্যান্ডেজ করেছে। এরপর ধারালো কিছু দিয়ে আঙ্গুলগুলো কেটেছে। ব্যান্ডেজ করা আঙ্গুলগুলো লাশের সাথে পাওয়া গিয়েছিলো। পায়ের পাতার চামড়া কিছু দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিলো। রোকনের ধারনা পুরো কাজটাই ভিকটিম কে জীবন্ত অবস্থায় করা হয়েছে। উপরের অংশে প্রথম ভিকটিমের মত পাওয়া গিয়েছিলো। মাথা আলাদা, দাঁত তুলে নেওয়া, গাল কাটা। এমনকি কানটাও কেটে নেওয়া হয়েছে। প্রথম ভিকটিমের মত এরও মাথার চামড়া তুলে নেওয়া হয়েছিলো। তৃতীয় ভিকটিম থেকে ষষ্ঠ ভিকটিম সবাই মিডিয়ার সাথে জড়িত ছিলো। তৃতীয় ভিকটিম ছিলো উঠতি মডেল। চতুর্থ ভিকটিম ছিলো নাটকের সাথে জড়িত। পঞ্চম ভিকটিম অবশ্য বাচ্চা। বারো বছরের শিশু শিল্পী। আর গতকাল খুন হওয়া ভিকটিম ছিলো বর্তমান মিডিয়ার টপ মডেল আর অভিনেত্রী। খুনের ধারা প্রতিটি প্রায় একই রকম তবে প্রতিটি খুনে নতুন নৃশংসতা যুক্ত হয়েছে। রোকনের কোন সন্দেহ নেই সব এক খুনী কাজ। আর খুনি অবশ্যই একজন। কারন সাইকোপ্যাথ ঘরে ঘরে জন্মায় না। তবে খুনির মোটামুটি টাকাপয়সা আছে। কারন ভিকটিম কে কিডনাপ করে নিয়ে আসা কম খরচের না। না হলেও নিজের গাড়ি থাকতে হবে। সুতরাং খুনি আর্থিকভাবে সচ্ছল। খুনি ফ্যান্টাসীতে ভুগছে। কারণ প্রথম খুনগুলো শুধু চুপচাপ কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হত। আর এখন খুনি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। তৃতীয় খুন থেকে শেষ খুন অর্থাৎ ষষ্ঠ খুন পর্যন্ত সে তার খুনে ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে। ভিকটিম কে সপ্তাহখানেক আগে সাদা ইনভেলাপের মধ্যে লাল রংয়ের একটা কাগজ পাঠাতে শুরু করে। লাল কাগজটা পরীক্ষা করে দেখেছে রোকন। দেখে মনে হচ্ছিলো লাল রঙে ভিজিয়ে শুকানো হয়েছে সাদা কাগজ কে। রোকনের কেন যেন মনে হচ্ছিলো এটা রক্তে ভেজানো। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তার ধারনা সত্য। ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিলো। আর সেটার ফলাফলটা আরো ভয়াবহ ছিলো। পূর্ববর্তী ভিকটিমের রক্তে ভেজানো চিঠি ছিলো সেটা। ডিএনএ টেষ্ট একটা সুবিধা করে দিয়েছিলো। সুবিধাটি হচ্ছে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিলো যে সব একজন খুন করছে। কেসটা নিয়ে ভাবছে রোকন। কোন উল্লেখযোগ্য সূত্র এখনো তার চোখে পরেনি। আচ্ছা কি কি জানি আমি খুনি সম্পর্কে? মোটামুটি বলা যায় কিছুই না। তবে কিছু সিদ্ধান্তে আসা যায়। যেমনঃ খুনির বয়স পঁচিশের উপরে। কারণ এর নিচের বয়সী কেউ এতো সাহস নিয়ে একের পর এক খুন করতে পারবে না। খুনি একা একা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কারন কাউকে জানালে ধরা খাওয়ার সম্ভবনা আছে। তাছাড়া এত পাগলামি কোন সন্ত্রাসীও সাপোর্ট করবে না। খুনি আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে আছে আর অবশ্যই নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। খুনি ফ্যান্টাসি প্রিয়। কারন রেড লেটার তার ফ্যান্টাসি প্রকাশ করে। আর সাথে তার আত্মবিশ্বাস ও প্রকাশ করে। সে ইচ্ছে করেই পুলিশ কে ক্লু দিচ্ছে যে সব খুন একজন করেছে। সে নিজের উপর খুব বেশি আত্মবিশ্বাস না হলে এ কাজ করতো না। সাথে সাথে সে পুলিশ আর ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের উপর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তবে খুনগুলোর পিছনে মোটিভ কি? ক্লিয়ার না রোকনের কাছে। স্রেফ পাগালামী পুরো ব্যাপারটি এটা মানতে রোকন পুরোপুরি নারাজ। কোন কারন অবশ্যই এর পিছনে রয়েছে। আর খুনগুলো অবশ্যই একটি অন্যটির সাথে সম্পর্ক যুক্ত। তবে এগুলোর মধ্যে রোকন তেমন কোন লিংক খুঁজে পাচ্ছে না। মিডিয়ার উপর রাগ? হতে পারে সম্ভবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আচ্ছা খুনি কিভাবে ভিকটিম বাছাই করে ? এটার উপর জোর দেওয়ার দরকার? যদি কোনভাবে লিংকটা বোঝা যায় তাহলে পরবর্তী টার্গেট বোঝা সহজ হবে। তবে এটা বোঝার একটা ভালো আইডিয়া রোকনের মাথায় এসেছে। তবে কাজে আসে কি না এটা নিয়ে রোকন কিছুটা সন্দেহ অনুভব করছে। তবে শুরু করে দেখা যেতে পারে। রোকন মোবাইল হাতে নিয়ে দ্রুত একটি সেভ করা নম্বরে কল করলো। তিনবার ডায়ালটোন শোনার পর মানুষের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো, - স্লামালিকুম স্যার - সালামটা ঠিকমতো শিখলে না রাসেল । আচ্ছা তোমাকে যে জন্য ফোন করেছি। ঢাকার যত পত্রিকা আছে সবগুলোর গত ছয়মাসের পেপার সংগ্রহ করো। এরপর সেগুলো থেকে ভিকটিম ছয়জনের সম্পর্কে যত তথ্য আছে সেগুলো বাছাই করে সেসব পত্রিকা আমার কাছে নিয়ে আসো। - কখন লাগবে স্যার - যত দ্রুত সম্ভব। কালকের মধ্যে না সম্ভব হলে পরশু -স্যার, আপনি কি আমাকে অপমান করছেন? আমাকে এ কাজের জন্য সরকার বেতন দিচ্ছে। আজকে রাত আটটার মধ্যে আপনার টেবিলে পেপার চলে যাবে । - আচ্ছা তাহলে আমার বাসায় পেপার পাঠিয়ে দিও। - জ্বি স্যার। - আচ্ছা bye কল কেটে রোকনের মুখে হালকাভাবে একটা হাসির ভাব ফূটে উঠলো। রাসেল ছেলেটাকে তার সবসময়ই ভালো লাগে। কর্মঠ ছেলে। কোন কাজে এখন পর্যন্ত না বলে নি। উপরন্তু তার কাজের উপর অনাস্থা প্রকাশ করতে খুব রেগে যায়। এই যেমন এখন হয়েছে। কালকে দিতে পারবে কি না সন্দেহ প্রকাশ করায় রাসেল রেগে গিয়েছে। রোকন অবশ্য কাজটি ইচ্ছে করেই করেছে। রোকন ভালোভাবেই জানতো এভাবে কথা বললে রাসেল রেগে গিয়ে দ্রুত কাজ করে দিবে। বুদ্ধিটা অবশ্য কাজে দিয়েছে।
রোকনের নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে। রোকন ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তা । তবে সাধারন কর্মকর্তা না। স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন এজেন্ট। উপরন্তু এই স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন চার্জ সে। রোকনের সম্পূর্ণ নাম জোবায়ের আহামেদ রোকন। বয়স একত্রিশ তার। এ বয়সে তার মাথায় বেশ কিছু সাদা চুল শোভা পাচ্ছে। তবে সাদা চুলগুলো দেখতে খারাপ লাগে না। গত চার মাসে ছয়টা খুন হয়েছে। হ্যাঁ প্রতিদিনই দেশে খুনোখুনি হয়। সেটা নিয়ে পুলিশের মাথাব্যাথা। ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের না। তবে এ খুনগুলো স্বাভাবিক না। তাই যত সমস্যা আর দায়ভার তাদের নিতে হয়। খুনগুলো খুব ভয়াবহ যার কারনে তার উপর এসে এ কেসের দায়ীত্ব বর্তাচ্ছে। প্রথম খুনটা হয়েছিলো গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ। পলিমারের ব্যাগে ভালো করে পেঁচিয়ে লাশটা খুনি ডাষ্টবিনে ফেলে গিয়েছে। ডাষ্টবিনের কুকুরগুলো লাশের গন্ধ পেয়ে অদ্ভুত আচরণ করেছিলো। তাই মানুষজন লাশ আবিষ্কার করতে পারে । লাশটির মাথা আলাদা করা ছিলো। পেটের অংশটা পুরোপুরি আলাদাভাবে ছিলো। কাটা অংশ দিয়ে নাড়িভুড়ি বের হয়ে ভয়াবহ অবস্থা। মাথাটাকেও খুনি রেহাই দেয়নি। মাথায় চামড়া তুলে ফেলা হয়েছিলো। এরপর দাঁতগুলো একটাও নেই। দেখে মনে হচ্ছিলো জীবন্ত অবস্থায় দাঁত টেনে তোলা হয়েছে। আর এ কাজে সম্ভবত প্লায়ার টাইপ কিছু ব্যবহার করা হয়েছে। ঠোঁটের অবস্থাও ভয়াবহ। ঠোঁটের দুপ্রান্ত ধারালো ছুরি দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। দাঁতহীন মাড়ি সেখানে থেকে বেরিয়ে ছিলো। যে মেয়েটার লাশ পাওয়া গিয়েছিলো তার জীবিত অবস্থার ছবি দেখেছিলো রোকন। যে কেউ এ মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে চাইবে। কিন্তু তার লাশের অবস্থা কেউ যদি সামনাসামনি দেখে তাহলে তার কয়েক মাসের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। মেয়েটার নাম ছিলো লিসা। লাশ আবিষ্কারের তিন দিনের মাথায় তাকে এ কেসে নিযুক্ত করা হয়। রোকন প্রথমে ধরে নিয়েছিলো ব্যক্তিগত আক্রোশে খুনটা হয়েছে। সেই হিসাবে তার তদন্ত চলছিলো। কিন্তু অক্টোবরের চব্বিশ তারিখের খুনটা তাকে অন্যকিছু ভাবতে বাধ্য করে। তাকে বাধ্য করে ভাবতে যে খুনি একজন সাইকোপ্যাথ। দ্বিতীয় খুনটা প্রথমটার থেকে কম যায় না। বলা যায় ভয়াবহতার দিক থেকে এক কাঠি উপরে। এবার ভিকটিম ছিলো বাইশ বছর বয়সী একটা মেয়ে। নাম তমা । ভার্সিটি পড়ুয়া সাধারণ মেয়ে। খুনের ভয়াবহতা বেশি বলার কারন হচ্ছে এবার খুনী মেয়ের নিচের অংশের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। মেয়ের পায়ের প্রতিটি আঙ্গুলের প্রথমে নখ তুলেছে সে। তারপর ব্যান্ডেজ করেছে। এরপর ধারালো কিছু দিয়ে আঙ্গুলগুলো কেটেছে। ব্যান্ডেজ করা আঙ্গুলগুলো লাশের সাথে পাওয়া গিয়েছিলো। পায়ের পাতার চামড়া কিছু দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিলো। রোকনের ধারনা পুরো কাজটাই ভিকটিম কে জীবন্ত অবস্থায় করা হয়েছে। উপরের অংশে প্রথম ভিকটিমের মত পাওয়া গিয়েছিলো। মাথা আলাদা, দাঁত তুলে নেওয়া, গাল কাটা। এমনকি কানটাও কেটে নেওয়া হয়েছে। প্রথম ভিকটিমের মত এরও মাথার চামড়া তুলে নেওয়া হয়েছিলো। তৃতীয় ভিকটিম থেকে ষষ্ঠ ভিকটিম সবাই মিডিয়ার সাথে জড়িত ছিলো। তৃতীয় ভিকটিম ছিলো উঠতি মডেল। চতুর্থ ভিকটিম ছিলো নাটকের সাথে জড়িত। পঞ্চম ভিকটিম অবশ্য বাচ্চা। বারো বছরের শিশু শিল্পী। আর গতকাল খুন হওয়া ভিকটিম ছিলো বর্তমান মিডিয়ার টপ মডেল আর অভিনেত্রী। খুনের ধারা প্রতিটি প্রায় একই রকম তবে প্রতিটি খুনে নতুন নৃশংসতা যুক্ত হয়েছে। রোকনের কোন সন্দেহ নেই সব এক খুনী কাজ। আর খুনি অবশ্যই একজন। কারন সাইকোপ্যাথ ঘরে ঘরে জন্মায় না। তবে খুনির মোটামুটি টাকাপয়সা আছে। কারন ভিকটিম কে কিডনাপ করে নিয়ে আসা কম খরচের না। না হলেও নিজের গাড়ি থাকতে হবে। সুতরাং খুনি আর্থিকভাবে সচ্ছল। খুনি ফ্যান্টাসীতে ভুগছে। কারণ প্রথম খুনগুলো শুধু চুপচাপ কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হত। আর এখন খুনি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। তৃতীয় খুন থেকে শেষ খুন অর্থাৎ ষষ্ঠ খুন পর্যন্ত সে তার খুনে ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে। ভিকটিম কে সপ্তাহখানেক আগে সাদা ইনভেলাপের মধ্যে লাল রংয়ের একটা কাগজ পাঠাতে শুরু করে। লাল কাগজটা পরীক্ষা করে দেখেছে রোকন। দেখে মনে হচ্ছিলো লাল রঙে ভিজিয়ে শুকানো হয়েছে সাদা কাগজ কে। রোকনের কেন যেন মনে হচ্ছিলো এটা রক্তে ভেজানো। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তার ধারনা সত্য। ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিলো। আর সেটার ফলাফলটা আরো ভয়াবহ ছিলো। পূর্ববর্তী ভিকটিমের রক্তে ভেজানো চিঠি ছিলো সেটা। ডিএনএ টেষ্ট একটা সুবিধা করে দিয়েছিলো। সুবিধাটি হচ্ছে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিলো যে সব একজন খুন করছে। কেসটা নিয়ে ভাবছে রোকন। কোন উল্লেখযোগ্য সূত্র এখনো তার চোখে পরেনি। আচ্ছা কি কি জানি আমি খুনি সম্পর্কে? মোটামুটি বলা যায় কিছুই না। তবে কিছু সিদ্ধান্তে আসা যায়। যেমনঃ খুনির বয়স পঁচিশের উপরে। কারণ এর নিচের বয়সী কেউ এতো সাহস নিয়ে একের পর এক খুন করতে পারবে না। খুনি একা একা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কারন কাউকে জানালে ধরা খাওয়ার সম্ভবনা আছে। তাছাড়া এত পাগলামি কোন সন্ত্রাসীও সাপোর্ট করবে না। খুনি আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে আছে আর অবশ্যই নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। খুনি ফ্যান্টাসি প্রিয়। কারন রেড লেটার তার ফ্যান্টাসি প্রকাশ করে। আর সাথে তার আত্মবিশ্বাস ও প্রকাশ করে। সে ইচ্ছে করেই পুলিশ কে ক্লু দিচ্ছে যে সব খুন একজন করেছে। সে নিজের উপর খুব বেশি আত্মবিশ্বাস না হলে এ কাজ করতো না। সাথে সাথে সে পুলিশ আর ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের উপর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তবে খুনগুলোর পিছনে মোটিভ কি? ক্লিয়ার না রোকনের কাছে। স্রেফ পাগালামী পুরো ব্যাপারটি এটা মানতে রোকন পুরোপুরি নারাজ। কোন কারন অবশ্যই এর পিছনে রয়েছে। আর খুনগুলো অবশ্যই একটি অন্যটির সাথে সম্পর্ক যুক্ত। তবে এগুলোর মধ্যে রোকন তেমন কোন লিংক খুঁজে পাচ্ছে না। মিডিয়ার উপর রাগ? হতে পারে সম্ভবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আচ্ছা খুনি কিভাবে ভিকটিম বাছাই করে ? এটার উপর জোর দেওয়ার দরকার? যদি কোনভাবে লিংকটা বোঝা যায় তাহলে পরবর্তী টার্গেট বোঝা সহজ হবে। তবে এটা বোঝার একটা ভালো আইডিয়া রোকনের মাথায় এসেছে। তবে কাজে আসে কি না এটা নিয়ে রোকন কিছুটা সন্দেহ অনুভব করছে। তবে শুরু করে দেখা যেতে পারে। রোকন মোবাইল হাতে নিয়ে দ্রুত একটি সেভ করা নম্বরে কল করলো। তিনবার ডায়ালটোন শোনার পর মানুষের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো, - স্লামালিকুম স্যার - সালামটা ঠিকমতো শিখলে না রাসেল । আচ্ছা তোমাকে যে জন্য ফোন করেছি। ঢাকার যত পত্রিকা আছে সবগুলোর গত ছয়মাসের পেপার সংগ্রহ করো। এরপর সেগুলো থেকে ভিকটিম ছয়জনের সম্পর্কে যত তথ্য আছে সেগুলো বাছাই করে সেসব পত্রিকা আমার কাছে নিয়ে আসো। - কখন লাগবে স্যার - যত দ্রুত সম্ভব। কালকের মধ্যে না সম্ভব হলে পরশু -স্যার, আপনি কি আমাকে অপমান করছেন? আমাকে এ কাজের জন্য সরকার বেতন দিচ্ছে। আজকে রাত আটটার মধ্যে আপনার টেবিলে পেপার চলে যাবে । - আচ্ছা তাহলে আমার বাসায় পেপার পাঠিয়ে দিও। - জ্বি স্যার। - আচ্ছা bye কল কেটে রোকনের মুখে হালকাভাবে একটা হাসির ভাব ফূটে উঠলো। রাসেল ছেলেটাকে তার সবসময়ই ভালো লাগে। কর্মঠ ছেলে। কোন কাজে এখন পর্যন্ত না বলে নি। উপরন্তু তার কাজের উপর অনাস্থা প্রকাশ করতে খুব রেগে যায়। এই যেমন এখন হয়েছে। কালকে দিতে পারবে কি না সন্দেহ প্রকাশ করায় রাসেল রেগে গিয়েছে। রোকন অবশ্য কাজটি ইচ্ছে করেই করেছে। রোকন ভালোভাবেই জানতো এভাবে কথা বললে রাসেল রেগে গিয়ে দ্রুত কাজ করে দিবে। বুদ্ধিটা অবশ্য কাজে দিয়েছে।
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
জনপ্রিয় পোষ্ট
-
.সৃজনশীল মানে আপন সৃষ্টি. সৃজন শব্দের অর্থ হলো সৃষ্টি , আর শীল শব্দের অর্থ হলো নিজ। অর্থাৎ সৃজনশীল শব্দের সম্...
-
আত্মহত্যা - সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান তাকভির হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মৃ...
-
প্রিয়া জগদীশচন্দ্র রায় Unversity of Calcutta তুমি কেমন আছো? সুদীর্ঘ ত্রিশ বছর হ’ল তোমাকে ছেড়ে এসেছি। আর এই ত্রিশ বছরে আমি বাধ্য হয়ে...
-
1 . আমরা যারা প্রাইমারি স্কুল পার করে , মাধ্যমিক , উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে কলেজে বা চাকরিতে আছি বা বসে আছি তাদের নিশ্চয় ...
No comments :
Post a Comment
Thank you